বাংলাদেশ সোসাইটির সংবাদ সম্মেলন

হককথা রিপোর্ট: বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং মামলার কারণে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার প্রেক্ষিতে সোসাইটির ট্রাষ্টিবোর্ড ও কার্যকরী পরিষদ-এর পক্ষ থেকে আজ শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সোসাইটির সদস্য ও হককথা’র পাঠকদের জন্য সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্য হুবহু নীচে তুলে ধরা হলো। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোসাইটির ট্রাষ্ট্রি বোর্ডেও অন্যতম সদস্য হাজী মফিজুর রহমান এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম এ আজীজ।
সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি সহ কার্যকরী পরিষদ, ট্রাষ্ট্রি বোর্ড ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা/সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধেয়, প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাষ্টিবোর্ডের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই সালাম, শ্রদ্ধা আর শুভেচ্ছা। সোসাইটির দ্বিবার্ষিক (২০২২-২০২৩) নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি ছাড়াও সোসাইটির বিরুদ্ধে মামলা ও উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং সোসাইটির সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতেই আজকের সংবাদ সম্মেলন।
প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা

আপনারা সবাই জানেন যে, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটি নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজ সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা সংগঠন’-এ পরিণত হয়েছে। এজন্য আমরা সোসাইটির প্রতিষ্ঠা সকল কর্মকর্তা ও সাবেক কর্মকর্তা সহ সকল প্রবাসীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে সদ্য প্রয়াত সোসাইটির সভাপতি মরহুম কামাল আহমেদ, সহ সভাপতি আবুল খায়ের খালেক ও কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকির এবং সাবেক কর্মকর্তা সহ মহামারী করোনায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করার পাশাপাশি সকলের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামা করছি।
প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা

আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে আমরা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছি। যার ফলে আমাদের প্রিয় এই সংগঠন সঙ্কটের মুখোমুখি। আমাদের বিশ্বাস সোসাইটি প্রিয় সকল প্রবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এই সঙ্কট সহসাই কেটে যাবে এবং সোসাইটি অতীতের চেয়ে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর সংগঠনে পরিণত হবে।
প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ৪৫ বছরের পুরনো এই সংগঠনের আজ নিজস্ব ভবন রয়েছে। রয়েছে অফিস, কার্যকরী পরিষদ, ট্রাষ্টি বোর্ড আর আজীবন সদস্য সহ ২৭ হাজারেরও বেশি সাধারণ সদস্য। বিগত ২০১৮ সালে সোসাইটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিলো। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু অনাকাংখিত একটি মামলার কারণে সেই নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত হয়ে যায়। আমরা আইনগতভাবে সেই মামলা মোকাবেলা করতে না করতেই মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে সঙ্গত কারনেই আমাদের জীবনযাত্রা তছনছ হয়ে যায়। এই করোনায় সোসাইটির বর্তমান কমিটির সভাপতি কামাল আহমেদ, সহ সভাপতি আবুল খায়ের খালেক, কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকির ও সাবেক কর্মকর্তা সহ শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীকে আমরা চিরতরে হারাই। করোনা কালে মানুষের এই চরম সঙ্কটে আমরা সবকিছু ভুলে সাধ্য মতো সবাই প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াই। সঙ্গত কারনেই নির্বাচন পিছিয়ে যায়। আমরা সোসাইটির কর্মকর্তারা যে যার অবস্থান থেকে ব্যক্তি উদ্যোগ ছাড়াও নিউইয়র্ক সিটি ও ষ্টেটের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করি। পাশাপাশি পেন্ডামিকের সময় ফিউনারেল সার্ভিস ছিলো দূষ্প্রাপ্য। তারপরও সোসাইটির পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি কবরের জায়গা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বেশীরভাগ কবর বিনামূল্যে সোসাইটির নিজস্ব কবরস্থানে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি করোনাসহ বিভিন্ন সময় মৃত্যুবরণকারী অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ফিউনেরাল/অন্তেষ্টিক্রিয়ার জন্য যারা সাহায্য চেয়েছে তাদেরও সাহায্য দেয়া হয়েছে। যা কমিউনিটির সবার কাছে প্রশংসিত। এছাড়াও আমরা করোনার কঠিন সময়ে কুইন্স ও ব্রæকলীনে এন্টি বডি টেস্টিং ছাড়াও ভ্যাকসিন সার্ভিস প্রদানের ব্যবস্থা করি। সোসাইটির ৪৫ বছরের ইতিহাসে অনেক প্রশংসিত কাজ হয়েছে তবে করোনাকালীন সময়ে গত দুই বছর বাংলাদেশ সোসাইটি যেভাবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশে থাকতে পেরেছে তা ছিল সর্বজন স্বীকৃত এবং সর্বমহলে প্রশংসিত।
প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা

আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, সোসাইটির সহ সভাপতি আব্দুল খালেক খায়ের জীবিতকালীন সময়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সাহায্যে তার নেতৃত্বে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বাংলাদেশে গিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা সাহায্য প্রদান করেন। এই অর্থ সোসাইটির কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের কাছ থেকে সংগৃহিত। একই সময় দেশের উত্তর বঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৭টি পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহ নির্মাণ করে দেয় হয়। এই অর্থও সোসাইটির কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের কাছ থেকে সংগৃহিত। এছাড়াও নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে অগ্নিকান্ডে নিহত তিন যুবকের মধ্যে দুই যুবকের জন্য অর্থ সাহয্য এবং সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত এক কিশোরের সাহায্যে অর্থ সহযোগিতা দেয়া হয়। এই অর্থও সোসাইটির কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এগুলো সোসাইটির অনেক অনেক সেবামূলক কর্মকান্ডের দুই/একটি উদাহরণ মাত্র। সোসাইটির এসব অনেক কর্মকান্ডের স্বাক্ষি আপনারা নিজেই।
প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা

অত্যন্ত মর্মাহত ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে একটি মামলার কারণে সোসাইটির নির্বাচন বন্ধ হয়ে গেছে। এই নিয়ে দুইবার নির্বাচন পিছালো। আজ আমাদের সাথে এখানে উপস্থিত আছেন সোসাইটির নির্বাচন কমিশনের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীরা।

সোসাইটির গঠনতন্ত্রে আছে চাইলেই কোন সদস্য মামলা করতে পারবেন না। সোসাইটির বিরুদ্ধে কোন সদস্যের কোন অভিযোগ থাকলে তাহলে তাকে প্রথমে কার্যকরী কমিটির কাছে লিখিত অভিযাগ জানাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী পরিষদ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা ট্রাষ্ট্রিবোর্ড-এর কাছে অভিযোগ আকারে পুনরায় দাখিল করার সুযোগ রয়েছে। ট্রাষ্ট্রি বোর্ড কোন ব্যবস্থা না নিলে সেক্ষেত্রে মামলায় যেতে পারেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মামলার বাদী সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাষ্টি বোর্ডের কাছে কোন অভিযোগ না জানিয়েই মামলার আশ্রয় নেন। যা অপ্রত্যাশিত।

আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত ১৫ নভেম্বর সোমবার মামলার বাদীর সংবাদ সম্মেলন। এই সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কুরুচিকর বক্তব্য। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। মরহুম সভাপতি কামাল আহমেদ সহ মরহুম আব্দুল খালেক খায়ের ও মরহুম আজাদ বাকের-কে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এসব মিথ্যা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্ত দের চরিত্র হনন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত অভিযোগুলোর কোন সত্যতা নেই।

প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা
আপনাদের কাছে বিনয়ের সাথে বলতে চাই যে, মামলা নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। কেননা, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমরা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করতে চাই। কিন্তু জনমনে যাতে কোন বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় তা জানাতেই আজকের সংবাদ সম্মেলন।

আমরা ঐ সংবাদ সম্মেলনের কতিপয় বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে চাই যে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির নিজস্ব অফিসে একজন অফিস সহকারী সপ্তাহের ৫দিন অফিস খোলা রাখতেন। তবে করনাকালে সোসাইটি অফিস বন্ধ ছিলো। আর যেহেতু সোসাইটির নামে মর্গেজ করা হয়নি। ফলে সেটি স্যাটিসফাইট করার কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও সোসাইটি সিটি বা ষ্টেট প্রশাসনের কাছ থেকে কোন গ্র্যান্ড নেয়নি। তাই সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদীর এসব বক্তব্যে কমিউনিটিতে সোসাইটি ও সোসাইটির কর্মকর্তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

অপরদিকে ২০১৮ সালের মামলার কারণে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর সেই মামলা আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হয়। সেই মামলায় সোসাইটি জয়ী হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বর্তমান সদস্য নিয়েই নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেন। কেননা, সদস্য বিষয়ে আদালতের কোন সিদ্ধান্ত ছিলো না। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের একদিন আগে মামলার ঘটনাই প্রমান করে এটি বাদী ও তার সহযোগীদের বাংলাদেশ সোসাইটির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্র।

প্রিয় সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাই/বোনেরা
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, প্রবাসী সকল বাংলাদেশী মনেপ্রাণে সোসাইটিকে ভালবাসে। আর যারা সোসাইটিকে ভালবাসে না, তারাই সোসাইটির ক্ষতি করতে চায়। সোসাইটির ক্ষতি করে সোসাইটিকে ভালবাসা যায় না। আমরা মনে করি প্রিয় এই সংগঠনকে রক্ষা করতে যেখানে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব, সেখানে মামলা-মোকদ্দমার প্রয়োজন কি? তাই কমিউনিটির সকলের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সোসাইটিকে রক্ষা করি, মামলাবাজদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করি।

আপনাদের মূলবান সময় দিয়ে আমাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ধন্যবাদান্তে-
বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষে
কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাষ্টিবোর্ড।

Copyright ©2016 Bangladesh Society Inc. All Rights Reserved. ★ Site Last Updated: 11-09-2022