বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সভায় জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র স্থানের জোরালো দাবী

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাদার সংগঠন তথা ‘মিনি পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র বার্ষিক সাধারণ সভায় কোরামের অভাবে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব পাস হয়নি। প্রস্তাব তিনটি সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সভায় সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়েছিল। সভায় সোসাইটির আগামী নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের জোড়ালো দাবী উঠায় কমিউনিটির স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে সোসাইটির সভাপতি জানিয়েছেন।
সিটির উডসাইডস্থ কুইস প্যালেস মিলনায়তনে ২৭ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় সোসাইটির সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মওলানা আশরাফুল ইসলাম। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করার পর দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান। সভায় সোসাইটির কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার।
সভায় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করেন যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার ও কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী। এছাড়া সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন সহ সভাপতি ফারুক হোসেন মজুমদার।
সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্টের উপর ৩৯ জন সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। এরা হলেন নাসির আলী খান পল, আলী ইমাম, আব্দুল মুকিত চৌধুরী, কাজী আজহারুল হক মিলন, মাহফুজুর রহমান, আতাউর রহমান সেলিম, মোহাম্মদ সাঈদ, মফিজুর রহমান, বদরুল হোসেন খান, আবু নাসের, এম আজিজ, মুজাহিদুল ইসলাম, ওয়াসী চৌধুরী, বাবুল চৌধুরী, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, নিশান রহীম, এডভোকেট এন মজুমদার, হারুন অর রশীদ, রুহুল আমীন সিদ্দিকী, জামান তপন, আব্দুল মান্নান, খান শওকত, জে সানি মোল্লা, এডভোকেট নাসির উদ্দিন, খবির উদ্দিন, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, হাকিকুল ইসলাম খোকন, আমির খান জাকির, মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ আনসার আলী, বাসেদ রহমান, সবুর হোসেন জাহাঙ্গীর, সারোয়ার খান বাবু, আমানত হোসেন আমান, আব্দুল বাসিত খান বুলবুল, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মীর জাকির, নূরুন্নাহার গিনি, সাইকুল ইসলাম, রেজাউল আজাদ ভুইয়া ও মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হাওলাদার তার রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যে বর্তমান
কমিটির ৪ জানুয়ারী শপথ গ্রহণ, ৭ ফেব্রুয়ারী আইডি এন ওয়াই সি এডুকেশনাল ওয়ার্কশপ, ২১ ফেব্রয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন, ২৯ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপন, ৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে আটক বাংলাদেশীদের মুক্ত করার ব্যাপারে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময়, ১৫ জুন সোসাইটির সাবেক সভাপতি এনামুল মালিক ও ট্রাষ্টি বোর্ড সদস্য রশিদ আহমেদ স্মরণে সভা, ২৮ জুন ইফতার পার্টির আয়োজন ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের বিমান ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননেন সাথে মতবিনিময়, ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন, ৩ অক্টোবর-৮ নভেম্বর পর্যায়ক্রমে সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা, ১৮ অক্টোবর পূর্ণমিলনী, ১৫-২২ নভেম্বর আন্তকক্ষ ক্রীড়া প্রতিয়োগিতার আয়োজন, ২৯ নভেম্বর সাহিত্য সভার আয়োজন এবং ১৯ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পালন সহ সোসাইটির চলতি বছরে সকল কর্মকান্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সদস্য সংখ্যা হচ্ছে এক হাজার ৮১০জন আর আজীবন সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৪১৬ জন। এরমধ্যে চলতি বছর এক হাজার ৮১০জন সাধারণ সদস্য ও ১০৯ জন আজীবন সদস্য পদ গ্রহণ করেন।
কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী তার রিপোর্ট বলেন, সর্বশেষ ৭৯ হাজার ৫৮৯ ডলার সাত সেন্ট নিয়ে চলতি কমিটির কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সকল খরচ বাদে ব্যাংকে সোসাইটির ব্যালেন্স দাড়িয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ২৩০ ডলার চার সেন্ট। তিনি বলেন, চলতি বছর সদস্য সংগ্রহ বাদ সোসাইটির আয় হয়েছে ৬৩ হাজার ৭০০ ডলার। তিনি বলেন, সোসাইটির অর্থ সাশ্রয়ের এবং যারা সোসাইটিকে অর্থ অনুদান করেন তাদের সুবিধার্থে ৫০১ (সি)(৩) আবেদন করার পর তা সংশ্লিষ্ট অফিসে গৃহীত হয়েছে।
সভায় সোসাইটির সাবেক কোন সভাপতির উপস্থিতি দেখা যায়নি। সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট বদরুন নাহার খান মিতা, একলিমুজ্জামান নুনু সহ ১৭৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সাধারণ সভা সম্পন্ন করতে (কোরাম) প্রয়োজনীয় ১০৫ জন সদস্য উপস্থিতির প্রয়োজন ছিলো। অপরদিকে সোসাইটির গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কোরামের প্রয়োজন ছিলো ২১৯জন। ফলে সভায় উত্থাপিত গঠনতন্ত্র সংশোধন সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব পাশ হয়নি। সোসাইটির গঠনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট ধারার সংশোধনী তিনটি ছিলো-
১.‘ব্রুকলীনে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নূন্যতম ৫০০ সদস্য প্রয়োজন ’ সেই স্থলে ৫০০ সদস্য তুলে দেয়া এবং জ্যামাইকা ও ব্রুকলীনের মতো ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা।
২.নির্বাচন বছরের ১৫ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ৫ সদস্যের স্থলে ৭ সদস্য করা।
৩.সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ দুই বছরের স্থলে তিন বছর করা।
সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্টের উপর আলোচনাকালে সদস্যবৃন্দ সোসাইটির উদ্যোগে জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র স্থান, নিজের ভোটার নিজে করা, ওয়েস সাইট চালু, অন লাইনে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা, বাংলা স্কুল চালু রাখা, প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ণ, প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠাতে আর্থিক সাহায্য করা, ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালু আন্দোলন জোরদার করা, ফুটবল লীগসহ অন্যান্য খেলাধুলার আয়োজন, সাবেক কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন ও মূলধারায় সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং কার্যকরী পরিষদে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। সভায় কোন কোন বক্তা সোসাইটির সদস্য পদ সকল প্রবাসী বাংলাদেশীর জন্য উন্মুক্ত করা এবং নির্বাচনের সময় ২/৫/১০ ডলার ফি ধার্য্য করারও প্রস্তাব রাখেন।
সভায় সোসাইটির সদস্যরা সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্টের প্রশংসা করেন এবং বর্তমান কার্যকরী কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে এই কমিটিকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় টেক্সাসের কারাগারে আটক ৮০জন বাংলাদেশী মুক্ত করার ব্যাপারে সোসাইটির ভূমিকার ভূয়ষী প্রশংসা করেন। উপস্থিত সদস্যদের বক্তব্যের পর সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরর দেন।
সভায় আব্দুর রহীম হাওলাদার বলেন, আমরা কমিউনিটির সেবায় সাধ্যমত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে তা শুধরে আগামী দিনে আরো ভালো কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
সভাপতি আজমল হোসেন কুনু বলেন, সোসাইটির কাজ কমিউনিটির সেবা করা। আমরা সেই সেবাই করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সোসাইটির বাংলা স্কুল পুনরায় চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের সাধারণ সভায় কোরামের গঠনতন্ত্র সংশোধন সম্ভব হলো না। তিনি আগামী সাধারণ সভায় কোরাম পূরণ করে প্রস্তাবগুলো পাশ করানোর জন্য সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কমিউনিটির স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আমরা আগামী দিনে জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। তিনি বলেন, সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯ কর্মকর্তা আমাদের দেয়া কথামত সোসাইটিকে প্রবাসীদের সংগঠনে পরিণত করেছি। সোসাইটির নির্বাচনে যাতে কেউ ভোট বা কারো মতামত কিনতে না পারে সেজন্য ভোটার সংগ্রহ অভিযান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
সভায় উল্লেখিত কর্মকর্তা ছাড়াও সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি, সাংগঠনিক সম্পাদক এম কে জামান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল ইসলাম, সাহিত্য সম্পাদক ওয়াহিদ কাজী এলিন, ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ এনায়েত আলী, স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা চৌধুরী, কার্যকরী পরিষদ সদস্য একেএম রফিকুল ইসলাম ডালিম, নাদির এ আইয়ুব, মোহাম্মদ সিরাজুল হক জামাল, নাসির উদ্দিন আহমেদ, আবুল কাশেম চৌধুরী ও সৈয়দ ইলিয়াস খসরু উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: ইউএনএ

Copyright ©2016 Bangladesh Society Inc. All Rights Reserved. ★ Site Last Updated: 11-09-2022